ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার প্রস্তুতির জন্য পাঁচটি পরামর্শ ।

আধুনিক সময়ে ক্যারিয়ার বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনার, বই এবং বিশেষজ্ঞ মতামত থেকে আমরা সব সময় শুনে থাকি- Follow your passion’ , অর্থাৎ আপনার যে বিষয়ে আগ্রহ বেশী, যা নিয়ে জানতে, শিখতে এবং কাজ করতে আপনার ভালো লাগে সেটা নিয়েই আপনি কাজ করুন। নিজের আগ্রহের বিষয় নিয়ে কাজ করলে একজন মানুষ সে বিষয়ে বেশী মনঃসংযোগ করতে পারেন। এতে শেখার কাজটি দ্রুত হয়। নিজের আগ্রহের বিষয়ে কাজ করলে মানুষের মধ্যে কাজে দ্রুত একঘেয়েমি চলে আসে না। এতে তিনি ষে বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে একজন বিশেষজ্ঞও হতে পারেন।

এখন প্রশ্ন হলো- আমি কি করে বুঝব আমার আগ্রহের বিষয় কোনটি? ঠিক কি করতে আমার ভাল লাগে?

নিজের আগ্রহ কোন বিষয়ে এটি রাতারাতি বুঝে ফেলার কোন কৌশল নেই। ব্যাপারটিকে তুলনা করা যেতে পারে আমাদের খাদ্যাভ্যাসের সাথে। একজন মানুষ যে রকম অনেক রকম খাবার ট্রাই করার মাধ্যমে নিজের খাদ্যাভ্যাস, পছন্দ, অপছন্দের ব্যাপারটি বুঝতে পারেন, নিজের পছন্দের বিষয়টি খুঁজে বের করার জন্য আমাদেরকে প্রায় একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। কি করে নিজের আগ্রহের বিষয়টি খুঁজে বের করা যায় এবং এরপর সে বিষয়ে কি করে ক্যারিয়ার প্রস্ততি নেয়া যায়, এ লেখায় আমি সংক্ষেপে এ বিষয়টি তুলে ধরব। 

১- নিজের আগ্রহের বিষয় খুঁজে বের করার প্রথম ধাপ হচ্ছে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানা। আধুনিক সময়ে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মের কল্যাণে কোন ফিল্ডে কি কি কাজ হচ্ছে, কি ধরনের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে, এটা জানা-বুঝা অনেক সহজ হয়ে গেছে। একজন ছাত্র চাইলে প্রায় বিনা খরচে বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স কারিকুলাম ফলো করে সহজেই সে বিষয়ে খুব মানসম্মত শিক্ষা লাভ করতে পারেন। বিভিন্ন বিষয়ে প্রজেক্ট বেসড শিক্ষার মাধ্যমে একদিকে যেমন নতুন সব বিষয়ে জানা যায় অন্যদিকে নিজের কোন জিনিসগুলো শিখতে ভাল লাগে সে বিষয়ে একটা পরিষ্কার ধারণা তৈরি হয়।  এছাড়া একটা বিষয়ে সর্বশেষ কি কাজ হচ্ছে, কি কি সফটওয়্যার শিখতে জানতে হবে সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। সব কোর্স ইংরেজি ভাষায় হওয়ায় এসব কোর্স করতে থাকলে ইংরেজি ভাষার দক্ষতাও তৈরি হয় যেটি পরবর্তীতে ক্যারিয়ার এবং উচ্চশিক্ষার জন্য খুব প্রয়োজন। 

২- নিজের আগ্রহ নিয়ে জানা বুঝার প্রাথমিক ধাপটি সম্পন্ন করার পর সে বিষয়ে কিছু প্রজেক্ট করা যেতে পারে। প্রথম দিকে এটি একটু চেলেঞ্জিং মনে হলেও ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতার সাথে সাথে  প্রজেক্ট করার কাজটি সহজ হয়ে উঠে। অনলাইন প্লাটফর্মে বিভিন্ন কোর্সের সাথে যেসব এসাইনমেন্ট থাকে প্রজেক্ট হিসেবে প্রায়ই এগুলো বেশ ভালো। মনে রাখতে হবে- নিজের আগ্রহের বিষয় খুঁজে পেলেই যে এ বিষয়ে কোন চ্যালেঞ্জ ছাড়া সব শিখে ফেলা যাবে ব্যাপারটি এরকম নয়। বরং আটকে গেলে বিভিন্ন ফোরামে প্রশ্ন করতে হবে। খুঁজে খুঁজে নিজে থেকেই একটা সমস্যার সমাধান করতে পারাটাই যেকোন কিছু শেখার সঠিক উপায়। আটকে গেলে সাহস এবং মনোবল ধরে রাখতে হবে। জিজ্ঞেস করতে হবে। ভয় পেয়ে ছেড়ে দিলে চলবে না, বরং ভয়কে জয় করা প্রয়োজন।

 

ছবি নেয়া হয়েছে এই সাইট থেকে।

৩- নিজের করা প্রজেক্টগুলোকে সুন্দর করে ডকুমেন্টেড করতে হবে। আধুনিক সময়ে প্রজেক্ট ডকুমেন্ট করার জন্য ব্লগ এবং ওয়েবসাইট খুবি জনপ্রিয়। তবে আমার পছন্দ হচ্ছে গিটহাব। গিটহাবে নিজের করা প্রজেক্টগুলোকে আপডেটেড করে রাখলে এটা ভবিষ্যতে চাকরি, উচ্চশিক্ষা সহ আরও অনেক কাজে লাগতে পারে। নিজের ভবিষ্যৎ প্রজেক্টেও রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। কাজটি পরিবর্ধন করে আর সুন্দর করা এবং একাধিক মানুষের সাথে কাজ করার জন্যেও গিট বা অন্যান্য ভার্সন কন্ট্রোল খুবই উপযোগী।

 

৪- যে দিকে ক্যারিয়ার গড়ার আগ্রহ তৈরি হয় সে বিষয়ে ছাত্র অবস্থা থেকেই বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞাপন পড়া উচিত। এতে সে ফিল্ডে কি ধরনের কাজ হচ্ছে, কি কি বিষয়ে স্কিল অর্জন করতে হবে এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা তৈরি হয়। এ বিষয়ে আমার পছন্দ লিঙ্কডইন। আমি প্রায়ই আমার পছন্দের বিষয়ে লিঙ্কডইনে চাকরির বিজ্ঞাপন পড়ে থাকি। আমার আগ্রহের ফিল্ডে আমি কি কি বিষয় জানি, নতুন কি শিখতে হবে এ বিষয়ে আমি ধারণা নিয়ে থাকি এবং নতুন স্কিল শেখার পরিকল্পনা করি।  ছাত্রদের জন্য লিঙ্কডইন প্রোফাইল তৈরি করা, নিয়মিত প্রোফাইল আপডেটেড রাখা এবং অন্য প্রফেশনালদের সাথে যুক্ত হওয়ার কাজটি শেখা খুবই প্রয়োজনীয়।

 

৫-  চাকরি পাওয়ার একটি অপরিহার্য ধাপ হচ্ছে নিজের সিভি সুন্দর করে তৈরি করা। প্রায়ই দেখা যায়, ছাত্রছাত্রীরা সুন্দর করে সিভি তৈরি করার ব্যাপারে মনযোগী না। আধুনিক সময়ে কি করে সুন্দর সিভি তৈরি করা যায় এ নিয়ে দারুণ সব অনলাইন কোর্স রয়েছে।  এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে কাভার লেটার। ভালো কাভার লেটার সম্পর্কে জানা থাকা সব শিক্ষার্থীর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। সিভি, কাভার লেটার তৈরির পর গ্রামার এবং বানান ঠিক করে নেয়া খুবই প্রয়োজন। এর জন্য  আধুনিক সময়ে দারুণ সব অনলাইন টুল রয়েছে।

 

মনে রাখতে হবে এটি রাতারাতি শিখে ফেলার বিষয় নয়- এর জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে।  ভয় না পেয়ে শুরু করতে হবে এবং অনুশীলন করতে করতেই এক সময় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন সম্ভব হবে।

 

জাহিদ রাজন (লিঙ্কডইন)

প্রকৌশলী, নেদারল্যান্ডস।

 

Post a Comment

2 Comments

  1. Thanks a lot for the writeup. I hope it will help many aspiring students.

    ReplyDelete