কর্মফল

সৌজন্যে: মোঃ রেজাউল হক রেসাম , ব্যাচ-২০১, ইইই বিভাগ, গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

বেশ খানিক বছর পর আজ নিজের গ্রামের বাড়িতে আসলাম। শহরে পড়াশোনা আর বিলেতে উচ্চশিক্ষা মিলিয়ে প্রায় বিশ বছর পর বাড়িতে ফিরলাম। বাবার শহরে ট্রান্সফারের পর গ্রামের কারো কোন খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি। শহরে যাওয়ার পর প্রতিযোগিতার নেশায় এতোটাই মেতে ছিলাম যে যার ফল আজ দুঃস্বপ্ন হয়ে আমায় উকি দিচ্ছে!! এইতোহ সেইদিনের কথা আমি,নিমল,রতন আর সন্দ্বীপ একসঙ্গে পাঠশালায় যেতাম। দেরি করে পাঠশালায় পৌছানো আর মাস্টার মশাইয়ের হাতে মার খাওয়া ছিল নিত্যদিনের কর্ম। কখনো কখনো রৌদ্রে আধপোড়া হয়ে চারজনে দাড়িয়ে থাকতাম। এখন সেখানে আর বিদ্যা দান করা হয় নাহ, নেই কোন মাস্টার মশাই। সেই পাঠশালার জায়গাটায় মস্ত বড় এক শপিংমল, যেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষ আসে তাদের বিলাশ বহুল জীবনকে সুখকর করে তোলতেহ। চন্ডীমণ্ডপের পুরোহিতের ভোগের প্রসাদ চুরি করে নিয়ে দৌড়ে গিয়ে নদীর ধারের বড় বট গাছটার নিচে ভাগ করে খেতাম। তবেহ নিমলটাহ প্রচুর ভয় পেতোহ। নিমল সবসময় বলতোহ; "যদি চুরি করে খাওয়ার জন্য ঠাকুর আমাদের পাপ দেয়।" তখন সবাই মিলে ওরে বলতাম; "ছোটদের ঠাকুর পাপ দেয় নাহ আর আমরা তোহ ঠাকুরের খুবই প্রিয়।" সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নদীতে একটা ডুব দিয়ে বাড়ি চলে যেতাম। সেই মণ্ডপ একটা ভাঙ্গা স্তূপে পরিণত হয়েছে। রাতের বেলায় এখন নাকি সেখানে জুয়োর আসর বসে। নানা রকম অনৈতিক কার্যকলাপ চলে ভাঙ্গা স্তূপটাকে ঘিরেহ। এতো কিছু দেখার পরেও দেখা মিললো নাহ শৈশবের বন্ধুদের সাথে। উদাসীন হয়ে রাস্তার ধার দিয়ে হাটছিলাম, হঠাৎই খেয়াল করলাম পাকা রাস্তা থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটা বড় বট গাছ। বুঝতেহ আর দেরি হলো নাহ এই সেই বটগাছ যার নিচে বসে আমরা গল্প করতাম। রাস্তা থেকে নেমে দৌড়ে গাছটার দিকে ছুটলাম, গাছটার আশ-পাশ আর্বজনার স্তূপ আর কাদামাটিতে ভরা। পাশের সেই নদীটা একটা ছোট্ট খালে রূপান্তর হয়েছে আর পঁচা পানির গন্ধে গা-টা গুলিয়ে আসছে। মনটাকে শক্ত করে গাছটার নিচে একটু জায়গা করে বসলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম গাছের কৌটরের মধ্যে কি জানি একটা রয়েছে। কৌটরের মধ্যে হাত দিতেই একটা কাঠের বাক্স বেড়িয়ে এলো। বাক্সটা খুলতেই দেখি একটা পত্র!! পত্রটার মধ্যে কি একটা লেখা বেশ অস্পষ্ট। পকেট থেকে চশমাটা বের করে পত্রটা পড়লাম!! তাতে লেখা ছিলো; "জানতাম তুই একদিন ঠিকই ফিরে আসবি।" স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম গাছটার নিচে……



Post a Comment

0 Comments