Courtesy: Ahanaf Ahmed, Batch-201, Dept. of EEE, Green University of Bangladesh
কোনো এক সময় মানুষ বলতো, স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। সময় অতিক্রম হয়েছে, মানুষের পূর্বের ধারণা বদলেছে। এখন সর্বসম্মতি তে সবাই একমত; স্বাস্থ্য নয় বরং সুস্বাস্থ্য সকল সুখের মূল।
সবাইকে চমকে দিয়ে আমি যদি বলি, সুস্বাস্থ্য সকল সুখের মূল নয়! কি অবাক হচ্ছেন?
আমি আসলে সুখ কে দেখতে চাই ভিন্ন ডাইমেনশন এ। যার সাথে শুধু শারীরিক সুস্বাস্থ্য নয় বরং মানসিক স্বাস্থ্য ও জড়িত।
কিছুটা পিছে থেকে শুরু করা যাক, ২০২১ সাল, যখন করোনা মহামারিতে পুরো দেশ টাল মাতাল অবস্থা, তখন বেসরকারী সংস্থা পরিচালিত এক গবেষণার ফল অনুযায়ী সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮৫% শিক্ষার্থী মানসিক বিষাদগ্রস্ত ছিল। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ঘুরেফিরে একই জাতীয় সমস্যার সম্মুখীন ছিল:
তম্নধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; হতাশা, নিজেকে তুচ্ছ মনে করা, হীনমন্যতা, নিজের বিগত দিনের সব সাফল্য কে ফেলনা বা তুচ্ছ মনে করা ইত্যাদি।
সেই সময়কার বেশ কিছু পত্রিকার তথ্য মোতাবেক, শুধু ২০২১ সালে এক বছরে আত্মহত্যার পরিমাণ ছিল ১৪ হাজারের ও বেশি। তম্নধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশই ছিল শিক্ষার্থীরা।
এবার তার থেকে একটু সামনে এগিয়ে, ২০২২ সালের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, সামাজিক এবং সেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা বলছে, সারাদেশে ২০২২ সালে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় ৫৩২ জন শিক্ষার্থী আত্নহননের পথ বেছে নিয়েছে। এই সমীক্ষার সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হলো, এদের মধ্যে প্রায় ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই স্কুল পর্যায়ের, এবং বাকি ৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থী কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের।
২০২৩ সালের প্রাকাংশে এসে এসব তথ্যে সচেতন শ্রেণীর মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পরার কথা।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্বস্বাস্থসংস্থা WHO এর তথ্য মতে শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, ও সামাজিক ভাবে ভাল থাকার নামই হলো স্বাস্থ্য।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে জটিল এবং কমন প্রশ্ন হলো, শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য গঠনে তাহলে সমাজ তথা জাতির করনীয় কী!
এ বিষয়ের সমাধানে অবশ্য বিজ্ঞান ভিত্তিক চিন্তাধারাগুলোই অগ্রাধিকার পাবে,
কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় নিম্নে আলোচনা করা যাক:
১। শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সেমিনার আয়োজন করা যেতে পারে।
২। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর উচিত শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন কোকারিকুলাম কার্যক্রম এ অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।
কারণ যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এক গবেষণায় দেখা গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেসকক শিক্ষার্থী কোনো প্রকার কোকারিকুলাম একটিভিটিতে সংযুক্ত নয়, তাদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজের অবস্থান নিয়ে সুখি নয় এবং মারাত্মক ভাবে হতাশাগ্রস্ত।
৩। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী করতে বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন করাও জরুরি কারণ একই গবেষণার ফল বলছে যারা পড়াশোনায় অমনোযোগী তাদের মনে বিভিন্ন হীনমন্যতা এবং আত্মবিশ্বাসী মনোভাবের অভাব বিদ্যমান।
৪। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন ছোট বড়, প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, এতে শিক্ষার্থীরা হয়ে উঠবে উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারি।
৫। বাবা-মাকে হতে হবে বন্ধু সুলভ, যাতে শিক্ষার্থীদের মনের ভাব তারা তাদের সাথে প্রকাশে সামান্য দ্বিধায় না ভুগে।
উপরের বিষয়গুলো একজন শিক্ষার্থীকে অনেকাংশে তার মানসিক হতাশার ব্যাপার গুলো ফুরিয়ে তাকে হয়তো করতে পারে প্রানচঞ্চল এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে প্রাণবন্ত। ২০২৩ সালে এটাই হোক সকলের প্রত্যাশা এবং উদ্যোগ।
0 Comments